জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ঘরে বসে

কোন কারনে আপনি যে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করেছেন, সেই ভোটার আইডি কার্ডে কোন ইনফরমেশন যদি ভুল চলে আসে তাহলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার প্রয়োজন হবে।

ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে কোনো রকমের অসুবিধা ছাড়াই আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করে নিতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি দেখে নিতে পারেন।

এই আর্টিকেল আলোচনা করা হবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

আপনি চাইলে মাত্র কয়েকটি স্টেপ ফলো করার মাধ্যমে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করে নিতে পারবেন।

এই কাজটি করার জন্য শুধুমাত্র আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে এবং তারপর এখানে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।

যেহেতু, এই বিষয় নিয়ে আমরা অনেকেই কনফিউশনে থাকে, সেজন্য এই আর্টিকেল এ সমস্ত কনফিউশন দূর করে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

স্টেপঃ১- বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট

এই কাজটি করার জন্য আপনাকে প্রথমত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে এবং তারপর এখানে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।

যদি অলরেডি আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করা থাকে তাহলে একাউন্টে লগইন করে নিতে হবে।

এবার একাউন্ট কিভাবে তৈরি করবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

স্টেপঃ২- একাউন্ট তৈরী করা

উপরে উল্লেখিত লিংকে ভিজিট করার পরে নিম্নলিখিত স্ক্রীনশটএর মত একটি পেইজ দেখতে পারবেন, সেই পেজটিতে আপনার আইডি কার্ডের নাম্বার, জন্ম তারিখ এবং ছবিতে প্রদর্শিত কোড প্রবেশ করিয়ে তারপরে “বহাল” বাটনের উপরে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

যখনই আপনার আইডি কার্ডের নাম্বার এবং আপনার আরো যে সমস্ত ইনফরমেশন রয়েছে, সে সমস্ত ইনফরমেশন গুলো দিয়ে দিবেন, তারপর এখানে একটি ফোন নাম্বার দিয়ে একাউন্ট ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে।

ফোন নাম্বার দেয়ার পরে সেই ফোন নাম্বার একটি ভেরিফিকেশন কোড চলে যাবে সেই ভেরিফিকেশন কোড বসিয়ে দেয়ার পরে, ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সেটআপ করে নিতে হবে।

তাহলে একদম পরিশেষে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

স্টেপঃ৩ – একাউন্টে লগিন করা

যদি অ্যাকাউন্ট তৈরি করার কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়, তাহলে এবার আপনাকে একাউন্টে লগইন করে নিতে হবে।

একাউন্টে লগইন করে নেয়ার জন্য পুনরায় নিম্নলিখিত লিংকে ভিজিট করুন এবং তারপরে আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দেয়ার মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করে নিন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় যে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন, সে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দেয়ার পরে ইমেজে রি-ক্যাপচা দেয়ার মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করে নিন।

যখনই একাউন্টে লগইন করার কাজ সম্পন্ন করে নিবেন, তখন নিম্নলিখিত স্ক্রীনশটএর মত একটি পেইজ দেখতে পারবেন।

এবার আপনি যেহেতু তথ্য সংশোধন করতে চান, সে জন্য প্রফাইল সেকশনে, যে অপশন রয়েছে সেই “প্রোফাইল” নামে অপশনের উপরে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

যখনই প্রফাইল নামে অপশনের উপরে ক্লিক করবেন, তখন আপনার অ্যাকাউন্ট রিলেটেড সমস্ত ইনফরমেশন গুলো দেখতে পারবেন।

এবার আপনি যেহেতু ইনফরমেশন গুলো এডিট করতে চান, সে জন্য “এডিট” নামের বাটনটির উপরে ক্লিক করে দিন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

এডিট নামের বাটনটির উপরে ক্লিক করার পরে তারা আপনাকে ফি এবং অন্যান্য বিষয়াদী সম্পর্কে জানিয়ে দিবে।

একবার এই সমস্ত বিষয়াদি সম্পুর্ন ভালোভাবে পড়ার পরে, “বহাল” নামক বাটনটি উপরে ক্লিক করুন।

বহাল নামক বাটন এর উপরে ক্লিক করার পরে, আপনি যে বিষয়গুলা পরিবর্তন করতে চান, সেই পরিবর্তনের উপরে ক্লিক করুন এবং তারপরে কি পরিবর্তন করতে চান সেটি এখানে লিখে দিন।

যখনই আপনি পরিবর্তনটি করে দিবেন, তারপরে “পরবর্তী” নামের বাটনের এর উপরে ক্লিক করে দিন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

পরবর্তী নামের বাটনটি উপরে ক্লিক করার পরে, আপনি কি পরিবর্তন করেছিলেন, সেই সম্পর্কে দেখে নিতে পারবেন।

যদি পরিবর্তনটি সঠিক থেকে থাকে তাহলে পুনরায় পরবর্তী নামের বাটনের উপরে ক্লিক করে দিন।

তারপরে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে অর্থাৎ আপনার অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করে নিতে হবে।

আপনি চাইলে বিকাশ ব্যবহার করার মাধ্যমে খুব সহজেই সরকারী ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করে নিতে পারবেন।

একাউন্টে রিচার্জ করে নেয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন।

স্টেপঃ ৪- অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করা

আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করেন, তাহলে খুব সহজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন।

এই কাজটি করার জন্য প্রথমত বিকাশ এপ এ লগইন করে নিন এবং তার পরে “পে বিল” নামক অপশনের উপর ক্লিক করুন।

পে বিল নামের অপশন এর উপরে ক্লিক করার পরে যখন পেইজটিকে একটু নিচের দিকে স্ক্রল করবেন, তখন এখানে “Nid service” নামক একটি অপশন দেখতে পাবেন।

এই অপশনটির উপরে ক্লিক করুন।

এবার আপনি যে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে চান, সেই এনআইডি কার্ডের নাম্বার টি এখানে যথাযথভাবে বসিয়ে দিন।

এখানে যে এনআইডি কার্ডের নাম্বার টি বসাবেন, সেই এনআইডি কার্ড এ নাম্বারে যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই একাউন্টে আপনার টাকা ট্রানজেকশন হয়ে যাবে।

এনআইডি কার্ডের নাম্বার টি বুঝে শুনে ভালোভাবে বসিয়ে দিন।

এবং এখানে যে প্রথম ড্রপডাউন মেনু আছে সে ড্রপডাউন মেনু উপরে ক্লিক করার পরে কি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন, সেটি সিলেক্ট করে নিন।

এনআইডি কার্ডের নাম্বার টি যথাযথ ভাবে বসিয়ে দেয়ার পরে, এন্টার বাটনে প্রেস করুন।

এবার পরবর্তীতে কত টাকা তাদের কাছে পে বিল করতে হবে সেটা বলে দিবে। মূলত ২৩০ টাকা তাদের কাছে প্রেরণ করতে হয়।

২৩০ টাকা পূর্বের ন্যায় প্রেরণ করে দিন এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।


টাকা প্রেরণ করার ১৫ মিনিট পরে আপনি যদি আপনার অ্যাকাউন্টের দিকে লক্ষ্য রাখেন তাহলে দেখতে পারবেন, যে আপনার একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হয়ে গেছে।

যদি একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হয়ে যায়, তাহলে পুনরায় ওই পেইজটিতে চলে আসুন এবং তারপরে “পরবর্তী” নামক বাটনটিতে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

এবার আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে চলে যাবেন।এবং সেই ধাপটিতে আপনার কাগজপত্রগুলো তাদের কাছে দিয়ে দিতে হবে।

এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভাল আর সেটি হল, কাগজপত্র হিসেবে আপনি চাইলে সমস্ত ডকুমেন্টস তাদের কাছে প্রেরণ করতে পারে।

আপনি চাইলে আপনার এসএসসি, এইচএসসি সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন কার্ড, আপনার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন, এবং এনআইডি কার্ড সহ আরও যাবতীয় কাগজপত্র আপলোড করে দিতে পারেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড  সংশোধন ঘরে বসে

সমস্ত কাগজপত্র যথাযথভাবে দেয়া হয়ে গেলে এবার নিশ্চিত করুন নামক অপশনের ওপরে চাপুন।

এবং তারপরে সমস্ত ইনফরমেশন গুলো এর পর্যালোচনা করার মাধ্যমে তাদের কাছে অ্যাপ্লিকেশনটি সেন্ড করে দিতে পারবেন।

পুনরায় যখন আপনি এই সমস্ত ইনফরমেশন গুলো যথাযথভাবে দেখে নিবেন, তখন “নিশ্চিত করুন” নামক বাটন ক্লিক করে ক্লিক করার মাধ্যমে একাউন্টের ইনফরমেশনগুলো নিশ্চিত করে দিন।

এবং অ্যাপ্লিকেশনটি তাদের কাছে প্রেরণ করে দিন।

আপনি তাদের কাছে অ্যাপ্লিকেশনটি সাবমিট করে দিবেন, তখন আপনি যখন পুনরায় আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করবেন তখন দেখতে পারবেন যে আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি পেন্ডিং রয়েছে।

যখন এ আপনি আপনার একাউন্টে পুনরায় লগইন করবেন, তখন নিম্নলিখিত স্ক্রিনশট এর মত পেইজ দেখতে পারবেন।

আর উপরে উল্লেখিত উপায়ে আপনি চাইলে খুব সহজেই যেকোন রকমের ভুলত্রুটি ঘরে বসে অনলাইনে মাধ্যমে সংশোধন করে নিতে পারবেন।

আইডি কার্ড সংশোধন হতে কতদিন লাগে?

এনআইডি কার্ড সংশোধন হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।

তবে যেকোনো একটি এনআইডি কার্ড সংশোধন হতে তিন মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি সময় নেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে হয়ে যেতে পারে।

কারণ, প্রতিদিন আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য কয়েক হাজার কিংবা লক্ষাধিক অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে।
যার মধ্যে থেকে আপনাকে খুঁজে বের করে দেখা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

সেজন্য, কোন রকমের দুশ্চিন্তা না করে অপেক্ষা করে যান।

যখনই আপনার আইডি কার্ড সংশোধন হয়ে যাবে, তখন আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টের পরিবর্তনটি জানিয়ে দেয়া হবে।

আমি কি মাল্টিপল জিনিস পরিবর্তন করতে পারব?

আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত পুরো আইডি কার্ড পরিবর্তন করে দিতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুলো পরিবর্তন করবেন, সে বিষয়গুলো স্বপক্ষে দলীল লাগবে।

উপরে উল্লেখিত উপায়ে আপনি চাইলে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কিংবা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে পারবেন।

আপনার পরিবর্তিত জিনিসগুলো স্বপক্ষে যে সমস্ত ডকুমেন্টস রয়েছে, সে সমস্ত রকমের ডকুমেন্টস প্রদান করলে, আপনি সমস্ত ইনফরমেশন গুলো পরিবর্তন করতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য কতগুলো ডকুমেন্টস প্রয়োজন?

আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনার আবেদন এর সাপেক্ষে ডকুমেন্টস প্রয়োজনবিধি লক্ষ্যণীয় হবে।

আপনি যদি কম বিষয়াদি সংশোধন করেন, তাহলে কম ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে এবং অতিরিক্ত বিষয়াদি পরিবর্তন করলে অতিরিক্ত ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে।

তবে যে কোনো ছোটখাটো ইনফর্মেশন যখন আপনি পরিবর্তন করবেন, তখন যে সমস্ত ডকুমেন্টস আপনার কাছে রয়েছে সে সমস্ত ডকুমেন্টস গুলো তাদের কাছে দিয়ে দিন।

কারন, কাগজপত্রে যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে তারা রিভিউ করার পরে আবার পুনরায় আপনাকে বলবে ডকুমেন্টস দেয়ার জন্য।

এক্ষেত্রে আপনার প্রচুর সময় লেগে যাবে, একই আইডি কার্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top